দুর্নীতি এড়াতে শিক্ষক নিয়োগ-এমপিওভুক্তি এনটিআরসিএতে: শিক্ষা উপদেষ্টা

 

নাহিদ ইসলামঃ শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে আর্থিক লেনদেনের বড় অভিযোগ আসছে। আগে শিক্ষা ভবনে এমপিওভুক্তি দেওয়া হলেও এখন তা মাউশির ৯টি অঞ্চলে দেওয়া হচ্ছে।এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতি ও অর্থ লেনদেন এড়াতে প্রয়োজনে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগ ও এমপিভুক্তি একসঙ্গে সম্পন্ন করা হবে। দেশের সবাই অনার্স-মাস্টার্স পড়ে বেকার হচ্ছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। গতকাল বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ কথা জানান। 

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষা নিয়ে কোনো সংস্কার কমিশন গঠনের পরিকল্পনা এ মুহূর্তে সরকারের নেই। এই খাত এখন চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। আগে শিক্ষা খাতে সব বিশৃঙ্খলা দূর করে দুর্নীতি রোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরপর শিক্ষা খাতের বরেণ্যদের নিয়ে একটি “শিক্ষা খাতের উপদেষ্টা পরিষদ” গঠন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’

গুচ্ছে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিনবার চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সমন্বিত ভর্তির প্রক্রিয়ায় থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তিতে কত টাকা ব্যয় হতো, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তারা কত টাকা আয় করছে, এই দুটি বিষয়ের হিসাব নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে এই হিসাব নেওয়া হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষা প্রশাসনের দুর্নীতি এক দিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। আমি মন্ত্রণালয়ে একবার বলেছি, সেটাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই। সেটি মন্ত্রণালয়ের সবাই শুনেছেন। কিন্তু শিক্ষার অধিদপ্তরগুলোয় যাইনি। সেখানে গিয়ে প্রথমে সতর্ক করা হবে। তারপর দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে একটি উদাহরণ তৈরি করা হবে।’ 

শিক্ষা উপদেষ্টার দাবি, বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা প্রথম খারাপ হয় ১৯৭২ সালে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ইউসুফ আলী। তাঁর একটা প্রচণ্ড ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। সেটা হলো, ভালো যে কলেজগুলো ছিল, নামকরা কলেজ যাকে বলে—বিএম কলেজ, ঢাকা কলেজ, মুরারীচাঁদ কলেজ, রাজশাহী কলেজ, প্রথমে এগুলোকে ইউনিভার্সিটি কলেজ বানিয়ে দিয়েছিল। তিনি বলেন, এরপর পলিটিক্যালি সব কলেজ জাতীয়করণ করা হলো। জাতীয়করণ না করলেও ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে কলেজ গড়ে তোলা হলো, অনুমোদন নেওয়া হলো। এভাবে গড়ে উঠল আজকের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি বেকার

সবাই অনার্স-মাস্টার্স পড়ে বেকার হচ্ছেন পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় জোর দিলেও বাংলাদেশে কেবল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পড়িয়ে বেকার তৈরি করা হচ্ছে উল্লেখ করে অর্থনীতির শিক্ষক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে। আর আমাদের এখানে উল্টো। সবাই অনার্স-মাস্টার্স পড়ে বেকার হচ্ছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলো তো আছেই, পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার।

’স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টি অন্যায্য উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁরা প্রাথমিকের সমমান। অথচ প্রাথমিকে জাতীয়করণ করা হয়েছে কিন্তু ইবতেদায়িকে বাইরে রাখা হয়েছে। তাঁদের সমস্যাটা জেনুইন, কিন্তু এই মুহূর্তে অনশন করে আমাদের বিব্রত করা ছাড়া আর কিছুই হবে না। এটি না করে বরং কীভাবে কী করা যায়, সেই চিন্তা করতে আমাদের সময় দেন। অগ্রাধিকার অনুযায়ী আমরা যাতে কাজ শুরু করে দিতে পারি। আমরা শুরু করে দিতে চাই, যাতে পরবর্তী সরকার এসে বুঝে যে তাঁরা আসলেই বঞ্চিত, তাঁদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন।’
আগের পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট

نموذج الاتصال